Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এক নজরে

এক নজরে ছাতক উপজেলার মৎস্য বিষয়ক তথ্যাদি



গাছ, পাখি, ফুল, পানি, মাছ ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদের এক অপরূপ জীববৈচিএ্য হলো সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা । নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর ইত্যাদি জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অএ উপজেলায় । এক সময় এখানকার জলমহাল গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত কিন্তু কালের বিবর্তনে একদিকে মাছের চাহিদা বেড়েছে, অপরদিকে জলজ পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয়, প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারনে প্রাচুর্যময় মুক্ত জলাশয়ে মাছের প্রাপ্যতা ক্রমশ: হ্রাস পাচ্ছে । স্বাদু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৫৪ প্রজাতির মাছ আজ প্রায় বিলুপ্ত । খাল-বিল ভরাট করে জনপদ গড়ে উঠা, বাঁধ নির্মাণ, কল-কারখানার বর্জ্য জনিত পানি দূষণ, কীটনাশকের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, অপরিণত মাছ ও ডিমওয়ালা মাছ ধরা ইত্যাদি কারণে মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন একেবারে সীমিত হয়ে পড়েছে । উন্নত চাষ পদ্ধতি, লাগসই প্রযুক্তি, টেকসই মৎস্য সংরক্ষণ ব্যব¯হাপনা, সহনশীল মৎস্য আহরন নীতিমালা, সম্মিলিত কর্মপ্রয়াস, সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহন করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে । ছাতক উপজেলার সাধারণ ও মৎস্য সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-


সাধারণ তথ্যাবলী:


১। উপজেলার নামঃ ছাতক

২। মোট আয়তনঃ ৪৩৪.৭৬ বর্গ কিলোমিটার

৩। মোট লোকসংখ্যাঃ ৩,২৯,২৬০ জন

৪। ইউনিয়নের সংখ্যাঃ ১৩ টি

৫। পৌরসভাঃ১ টি

৬। গ্রামের সংখ্যাঃ৫৪৭ টি

৭। মৌজার সংখ্যাঃ ৩১০ টি

৮। মোট আবাদি জমির পরিমানঃ ৫৪,৬২৯ একর

৯। অর্থকরি ফসলঃধান, পাট, গম, সরিষা,

গম, মাসকলাই

১০। দর্শনীয় ¯হানঃ ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী,

লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট

ফ্যাক্টরী, ছাতক প্লাপ

এন্ড পেপার মিলস

১১। শিক্ষার হারঃ ৩১.৫০%


মৎস্য বিষয়ক তথ্যাবলীঃ


১। মোট জলায়তনঃ ৯৮৯০ হেক্টর

২। পুকুরের সংখ্যাঃ ৭০৬০ টি

৩। পুকুরের আয়তনঃ ৭৬২ হেক্টর

৪। বেসরকারী পুকুরের সংখ্যাঃ ৭০৪৩ টি

৫। খাস পুকুরের সংখ্যাঃ১৭ টি

৬। পুকুরে মাছের মোট উৎপাদনঃ১৮৬৬.৭২ মেঃ টন

৭। মোট জলমহালের সংখ্যাঃমোট ১১৪ (২০ একরের অধিক ৪১টি, ২০ একরের কম ৭৩ টি

৮। মোট জলমহালের আয়তনঃ১৪৫০.২১ হেক্টর

৯। বিলের সংখ্যাঃ৮৬ টি

১০। বিলের আয়তনঃ১০৬৭.৮৫ হেক্টর

১১। বিলে মাছের উৎপাদনঃ ১২৯২.০০ মেঃ টন

১২। প্লাবন ভূমির আয়তনঃ ২২১০৬ হেক্টর

১৩। প্লাবন ভূমির মাছের উৎপাদনঃ ২৪৪০.০০ মেঃ টন

১৪। নদীর সংখ্যাঃ১২ টি

১৫। নদীর আয়তনঃ ৭৬১.১৩ হেক্টর

১৬। নদীতে মাছের উৎপাদনঃ ৩১৫.০০ মেঃ টন

১৭। খাল/বরোপিটের সংখ্যাঃ ২৮ টি

১৮। খাল/বরোপিটের আয়তনঃ ৭৮.১৩ হেক্টর

১৯। খাল/বরোপিটে মাছের উৎপাদনঃ ১৯.৫০ মেঃ টন

২০। ধান ক্ষেতে মাছ চাষঃ৭.২০ হেক্টর

২১। ধান ক্ষেতে মাছের উৎপাদনঃ ১১.৫০ মেঃ টন

২২। সরকারী মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারঃ নাই

২৩। সরকারী নার্সারীর সংখ্যাঃ নাই

২৪। ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারীর সংখ্যাঃ ১০ টি

২৫। বেসরকারী মৎস্য খামারঃ৩০ টি

২৬। বেসরকারী পর্যায়ে পোনা উৎপাদনের পরিমানঃ ১২০০০০০ টি

২৭। মৎস্যজীবির সংখ্যাঃ ১৫০০০ জন

২৮। বরফ কলের সংখ্যাঃ ০১ টি

২৯। মাছের মোট উৎপাদনঃ ১১৫০০.১৯ মেঃ টন

৩০। মাছের মোট চাহিদাঃ ৭৮০০.০০ মেঃ টন

৩১। মাছের উদ্বৃত্তঃ৩৭০০.১৯ মেঃ টন



        ছাতক উপজেলার জলমহাল ব্যবস্থাপনার বর্তমান অবস্থাঃ 


বর্তমানে ২০ একরের উর্ধ্বের আযতনের জলমহালগুলি টেন্ডারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন থেকে এবং ২০ একরের নীচের জলমহালগুলি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে ইজারা প্রদান করে থাকেন । ফলে ইজারাগ্রহীতাগণ অধিক লাভের আশায় মৎস্য সংরক্ষণ আইন ও নীতিমালা অনুসরণ না করে নির্বিচারে মৎস্য আহরণ করে থাকে । সরকার উন্মুক্ত জলাশয়ে ইজারা পদ্ধতি বাতিল করে প্রবাহমান জলাশয়গুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় যাতে জলাশয় তীরবর্তী প্রকৃত দরিদ্র মৎস্যজীবিগণ বৈধভাবে নিবিঘ্নে মৎস্য আহরণ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে । কিন্তু দেখা যায় যে জলাশয় গুলো ইজারা না থাকায় একশ্রেনীর প্রভাবশালী গোষ্ঠী ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকা নিজস্ব নিয়ন্ত্রনে  নিয়ে নির্বিচারে মৎস্য আহরনে করে থাকে । ফলে উন্মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রমসহ অন্যান্য জীববৈচিএ্য আজ ধ্বংসের সম্মুখীন ।


জলমহাল ব্যবস্থাপনার সমস্যাবলীঃ


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কার্যবিধিমালা মোতাবেক দেশের মৎস্য চাষ ও মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রনালয় হচ্ছে মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রনালয় । কিন্তু সরকারী এসব জলমহাল ব্যব¯হাপনার উপর মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রনালয় কোন কর্তৃত্ব নেই । এ কারনে দেশের এ বিশাল মৎস্য সম্পদকে আধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক চাষের আওতায় আনা তথা প্রাকৃতিক সম্পদ আধুনিক ধ্যান ধারনায় ব্যব¯হাপনা করা সম্ভব হচ্ছে না । ভূমি মন্ত্রনালয় কর্তৃক রাজস্ব ভিত্তিক ব্যব¯হাপনার ফলে উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং জলমহালগুলি প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে সংরক্ষিত না হয়ে বিনষ্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে । ইজারা গ্রহীতাগণ জলমহালের উন্নয়ন বা মৎস্য মজুদ বৃদ্ধি না করে নির্বিচারে মৎস্য আহরণ করে যাচ্ছে ।


 জলমহাল ব্যবস্থাপনার সমস্যাবলী নিম্নরূপ-


১। উৎপাদন ভিত্তিক পরিকল্পনার পরিবর্তে রাজস্ব/ইজারা পদ্ধতি অনুসরণ ।

২। জৈবিক ব্যব¯হাপনার পরিবর্তে আহরণমূলক ব্যব¯হাপনা ।

৩। দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা প্রদান না করায় ইজারা গ্রহীতাদের উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম

গ্রহনের অনীহা ।

৪। প্রবাহমান নদীতে নির্বিচারে মৎস্য আহরণ ।

৫। জেলে সম্প্রদায় প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আর্থ-সামাজিক অব¯হার

ক্রমাবনতি ।

৬। জলমহাল ব্যব¯হাপনায় সুফলভোগী হিসাবে জেলে সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত

না হওয়া ।

৭। জলমহালসমূহ ভূমি মন্ত্রনালয়য়ের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকায় মৎস্য ও পশুসম্পদ

মন্ত্রনালয়য়ের পক্ষে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা ।

৮। নদী সমূহে অধিকমাএায় পলি জমে মাছের আবাস¯হল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ।

৯। অপরিকল্পিতভাবে রা¯তা ও বাঁধ নির্মাণের ফলে মাছের চলাচলে বাঁধা প্রাপ্ত হচ্ছে ।

১০। কৃষি কাজের জন্য অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও অন্যান্য

রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর উপর মারাত্মক

প্রতিক্রিয়া হয় ।

১১। কারেন্ট জাল, ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছের পোনা নিধন ।

১১। প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ধরায় ।

১২। মাছের প্রজনন ক্ষেএ নষ্ট হওয়ায় ।

১৩। মৎস্যজীবিদের শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব ।

১৪। লাগসই প্রযুক্তির অভাব ।

১৫। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি পানিতে নিক্ষেপ ।

১৬। পানি শুকিয়ে কৃষি সেচ কাজে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে মাছের আবাস¯হল কমে

যাচ্ছে ।

১৭। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবহনের সমস্যা ।

১৮। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাট ইত্যাদি ।

১৯। সহজশর্তে কৃষি ঋণের অপ্রতুলতা ।

জলমহাল ব্যবস্থাপনার ও উন্নয়নের সম্ভাব্য সুপারিশমালাঃ

১। রাজস্ব ভিত্তিক ইজারা পদ্ধতির পরিবর্তে উৎপাদন ভিত্তিক ইজারা ব্যব¯হার প্রবর্তন করা ।

২। আহরণমূলক ব্যব¯হাপনার পরিবর্তে জৈবিক ব্যব¯হাপনা করা ।

৩। দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা প্রদানের মাধ্যমে ইজারা গ্রহীতা কর্তৃক জলমহালের উন্নয়নমূলক কাজ

নিশ্চিত করা ।

৪। জলমহালগুলোতে সহনশীল মাএায় মৎস্য আহরণ করা ।

৫। জেলে সম্প্রদায়কে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা ।

৬। জলমহাল ব্যব¯হাপনায় সুফলভোগী হিসাবে জেলে সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ।

৭। জলমহালগুলোকে ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রনালয় হস্তান্তর পূর্বক

উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা ।

৮। নদী/খাল তথা জলমহালসমূহ খননের মাধ্যমে মাছের আবাস¯হল/প্রজনন ক্ষেএ

পুনরুদ্বার করা ।

৯। পরিকল্পিতভাবে রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ করা ।

১০। কৃষি জমিতে সহনশীল মাএায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা ।

১১। মৎস্য আইনের সঠিক প্রয়োগ/বাস্তবায়ন ।

১২। লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর/বাস্তবায়ন ।

১৩। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য যাতে সরাসরি পানিতে না পড়ে তার ব্যব¯হা গ্রহন করা ।

১৪। মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ¯হাপন করা ।

১৫। সহজ শর্তে প্রকৃত দরিদ্র মৎস্য চাষীদের ঋণ প্রদান করা ।

১৬। মৎস্যজীবি/মৎস্যচাষী/পুকুর মালিকদের নিয়ে মৎস্য আইন ও মাছ চাষ সম্পর্কে

সচেতনতামূলক সভা করা ।

১৭। উন্মুক্ত জলাশয়ে বেশী পরিমান মাছের পোনা অবমুক্ত করা ।

১৮। মজা পুকুরগুলোকে সংস্কারের আওতায় আনা ।

১৯। মৎস্যচাষীদের বেশী বেশী প্রশিক্ষনের ব্যব¯হা করা ।

২০। মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরী/প্রতিষ্ঠা করা ।

২১। সুষ্ঠ ও সবল পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ।

২২। সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে বেসরকারী সং¯হাগুলোকে ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহন

করতে হবে ।

২৩। অধিক পরিমানে হ্যাচারী/নার্সারী তৈরী করা ।

২৪। পাম্প/¯হায়ী মেশিন দ্বারা জলাশয় না শুকিয়ে মাছ ধরা ।

২৫। বিলুপ্ত প্রজাতির মাছকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা।

২৬। কারেন্টজাল সহ অন্যান্য অবৈধ জাল দ্বারা মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা ।